রজত আমার এক মাত্র ছেলে। সবে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে হায়দ্রাবাদে একটা কোম্পানির কাজে যোগ দিয়েছে। রজতের বয়স এখন চব্বিশ পঁচিশ হবে। একদিন রজতের বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এক ঠাকুর মহাশয় রজতের বাড়ি এলেন। মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে। বয়স উনিশ কুড়ি হবে। দেখতে বেশ সুন্দর। বাবা স্কুল মাস্টার। রজতের বাবা মায়ের তেমন কোনো ইচ্ছে নেই, এখনই ছেলের বিয়ে দেওয়ার। ঠাকুর মহাশয় বললেন মেয়েটি বেশ ভালো। ভারী লাজুক প্রকৃতির। মুখ খানি স্বয়ং লক্ষ্মী প্রতিমার মত। ঠাকুর মহাশয় চোখ দুটো বন্ধ করে বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি ঘরের মধ্যে মা লক্ষ্মীর আবির্ভাব হতে চলেছে। লক্ষ্মী বৌ মায়ের একখানি ফোটো রেখে যাচ্ছি। ফটোর পেছনে লেখা বাড়ির ঠিকানা ”কদম্ব বাড়ি বহেরা গ্রাম ” রজতের বাবা মা ঠাকুর মহাশয় কে একটি প্রণাম করলেন।
- ঠাকুর মহাশয় চলে আসার পর। রজতের বাবা মা ফটো খানি দেখা মাত্র মেয়েটিকে পছন্দ হয়েছে। সত্যি মা লক্ষ্মী। রজত এই মেয়েকে না বলতে পারবে না। তাছাড়া আগামী দশ তারিখে রজত বাড়ি আসছে। ও সরাসরি মেয়েকে দেখে আসুক। ওর পছন্দে আমাদের পছন্দ। মেয়ের বাড়িতে খবর পাঠানো হলো। আগামী বুধবার ছেলে তার বন্ধু অমিত কে সঙ্গে নিয়ে মেয়ে দেখতে আসছে। মেয়ে দেখার পর রজত তার মাকে এসে বলে মা, আমার মেয়ে পছন্দ হয়েছে। অমিতের ও মেয়েকে খুব পছন্দ হয়েছে। ছেলের এই কথা শুনে বাবা মা খুব খুশি হয়েছেন। ৪ঠা শ্রাবণ ঠাকুর মহাশয়কে নিয়ে বিয়ে দিন ধার্য্য করলেন। ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দিলেন। বিয়ের একমাস পর ছেলে বউ রেখে হায়দ্রাবাদে তার চাকরির জায়গায় চলে যায়। দেড় দু মাস অন্তর একবার করে বাড়ি আসে। ছেলে সেখানে ফ্ল্যাট নিয়েছে। শুনেছি এবারে এসে বউ নিয়ে চলে যাবে। রজত এক সপ্তাহ বাড়িতে থেকে বউ নিয়ে হায়দারাবাদে চলে যায়। রজত সকাল নয় টায় অফিস বেরিয়ে যায় সন্ধ্যা সাতটার বাড়ি ফিরে আসে। বউ এর সেখানে এক মাস থাকার পর একা একা তার আর মণ টিকে না। সে শশুর শাশুড়ি কাছে থাকতে চাই। হায়দ্রাবাদে তার আর মন টিকে না। রজত তাকে জোর করে আরো এক সপ্তাহ কাছে রাখে। তার পর রজত তাকে বাবা মায়ের কাছে রেখে আসে।
এখানে এসে দেখা গেলো বৌমা সারা সারা দিন ঘুমিয়ে কাটাই। সংসারে কোনো কাজকর্ম করে না। রাতে জেগে থাকে ঘুমায় না। আমি বললাম বৌমা দিনে ঘুমালে রাতে ঘুমাবে কী করে। বৌমা বললো মা এটাই আমার অভ্যাস। আমি দিনেই ঘুমায়। রাতে ঘুমাতে পারিনা। এভাবেই সে চলতে থাকে।একদিন ভোর বেলায় তার শাশুড়ির চোখে পড়ে বৌমার ঘরের ভেতর থেকে কে যেন চলে গেল। শাশুড়ি বৌমাকে জিজ্ঞাস করলে বৌমা বলল, কোথায় কৈ নাতো। শাশুড়ি ভাবলো আমি কি তাহলে ভুল কিছু দেখলাম। রাতের অন্ধকার টা যদিও তখন ও ছিল। তবে আমি একজন কে দেখেছি। তাহলে কি কোনো চোর হবে? যাক,তবে বিষয়টা একটু আমার চোখে চোখে রাখা দরকার। ছেলের কানে এখন এসব কিছু তোলা দরকার নেই। আর কিছু দিন যাক। তবে আমার মনে হয় বৌমার কাছে রাত্রিতে কেউ না কেউ একজন আসে।একদিন সামনের বেগুন বাড়িতে ঘুপচি মেরে সারারাত বসে কাটালাম। সেদিন কাউকে দেখতে পেলামনা। মনে হয় বৌমা বিষয়টা জানতে পেরে তাকে সতর্ক করে দিয়েছে।
এভাবে প্রায় আমার মনে হয় কে যেন আসে আর চলে যায়। কিন্তু আমি সাহস করে ধরতে পারি না। রজত আগামী শনিবার বাড়ি আসছে ওকে কিছুটা জানানো দরকার। আমি রজতকে বিষয়টা খুলে বলি রজত আমার কথাটা নিল। তবে ও আমাকে কিছু বললো না। রজত তুমি যখন এসেছ বৌমাকে নিয়ে যাবে। আমি তো ওকে নিয়ে যেতে চাই মা, ও তো সেখানে মোটেই থাকতে চাই না। দেখো বাবা এখন তোমরা দুজনে বিবাহিত। একে অপরকে ছেড়ে থাকা তোমাদের ঠিক নয়। বৌমা বললো, এবারে সে যাবে না। পরের বারে যাবে। রজত এক সপ্তাহ থাকার পর হায়দ্রাবাদ যাওয়ার নাম করে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। কিন্তু সে সেদিন হায়দরাবাদ না গিয়ে সন্ধ্যা বেলায় বাড়ির সামনে বেগুন গাছের ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকল। রাত্রি এগার টার সময় একটি ছেলেকে লুঙ্গি পরা গামছা গায়ে অবস্থায় দেখতে পেলাম। আমি কোনো কিছু সাড়া না করে ঝাপটি মেরে বসে রইলাম। লোকটি গুটি গুটি পায়ে বউয়ের ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজায় তিনটি টোকা মারার সঙ্গে সঙ্গে আমার বউ দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো। এবং ছেলেটাকে নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। আমি থ মেরে বসে পড়লাম। এই জন্য তাহলে আমার সঙ্গে হায়দ্রাবাদে থাকতে চাই না। আমার সঙ্গে এতো ভালোবাসার অভিনয় করতে পারে?
আমি বাড়ির সামনে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়া দিই। ওরা আর দরজা খুলছে না। মা বাবা সবাই উঠে এলো। তবুও তারা দরজা খুললো না। প্রতিবেশীরা ছুটে এলো। তারা দরজা ভেঙে ছেলেটাকে অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে আনলো। একি অমিত তুই। তুই না আমার বন্ধু। তুই আমার এতবড়ো সর্বনাশ করলি। তুই বলতে পারতিস আমি তোকেই বিয়ে দিতাম। ছিঃ ছিঃ। যা একে এক্ষুনি নিয়ে যা। আমি আজ এখনি এই অবস্থাতে মেয়েটাকে ডিভোর্স দিছি। প্রতিবেশীরা তাতে একমত। এই রাতের মধ্যে প্রতিবেশীরা মেয়েটিকে অমিতের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসে। মেয়ের বাড়িতে খবর পাঠানো হলো।মেয়ের বাবার আসার আগে মেয়ে অমিতের বাড়িতে গলায় ফাঁস আটকে মারা যায়। পুলিশ এসে অমিতকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। অমিত পুলিশের কাছে সমস্ত দোষ স্বীকার করে নেয়। কোর্টে তার শাস্তি ধার্য্য করা হয়।